বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে পালালেন থাই প্রধানমন্ত্রী

Tweet

Thai Presidentদৈনন্দিন ডেস্ক:
সরকারের বিরুদ্ধে “জনগণের ক্যু” শুরু করেছে থাইল্যান্ডের সরকার বিরোধী হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। সরকারি অনেকগুলো ভবনে ঢুকে পড়ে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। রোববার উন্মত্ত বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ভবনে ঢুকে পড়লে সেখানে অবস্থানরত দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনোয়াত্রা ভবনটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। বিক্ষোভকারীরা সরকারি একটি গণমাধ্যমের দপ্তরও দখল করে নিয়েছে।
এসব সংঘর্ষে সরকারের পক্ষীয় এক সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এই নিয়ে দুই দিনে রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশটির রাজধানী ব্যাংককে দুই জন নিহত হলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষে ৪৫ জন আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ইংলাককে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র আন্দোলন শুরু করেছে সরকার বিরোধীরা।
২০১১ সালে নির্বাচনে জিতে থাইল্যান্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন ইংলাক। সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য তিনি আন্দোলনকারীদের রাস্তা খালি করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিছিলেন।
রোববার ভোরে ব্যাংককের একটি স্টেডিয়ামের পাশে রাস্তায় ইংলাকের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষে শুরু হলে সরকারি ভবনগুলো রক্ষার জন্য পুলিশ সেনাবাহিনীর সাহায্য নেয়। সেখানে ইংলাকের প্রায় ৭০ হাজার সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সকালে স্টেডিয়ামের পাশের রাস্তাটিতে প্রচুর ভাঙ্গা কাচ ও পাথর পড়ে ছিলো।
এদিকে সরকার সমর্থক ‘রেড শার্ট’ দলের একজন নেতা জাতুপর্ন প্রোমফানের দাবি সংঘর্ষে তাদের চারজন কর্মী নিহত হয়েছেন। তবে রয়টার্স একজন নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। নিহত ব্যক্তি ৪৩ বছর বয়সী ভিরজ কেমনাক। এর আগে শনিবার সরকার বিরোধীরা একটি যাত্রীবাহী বাসে হামলা চালায়। তারা ভেবেছিলো ওই বাসে করে সরকারের সমর্থকরা যাচ্ছেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় বিরোধীরা একটি ট্যাক্সিও ভাংচুর করে, যেখানে লাল শার্ট পরা যাত্রী ছিলেন।
এরপর রাত ৮টার দিকে রামকামহেং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একজন বন্দুকধারী সরকার বিরোধীদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
সেখানে কয়েকশ সরকার বিরোধী লোকজনকে স্টেডিয়ামে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে একজন নিহত হয়েছেন। তবে কে গুলি ছুড়েছে সেটা জানা যায়নি।
রাত ভর সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাত ২টার দিকে ৩৬ বছর বয়সী কিত্তিসাক শ্রীসানথরন রয়টার্সকে বলেন, তিনি রেড শার্ট গার্ডসদের একটি দলের সঙ্গে বসে থাকার সময় হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। “আমি ঘরে তৈরি বোমা ও গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। লোকজন পাথর ও কাচের বোতল ছোড়া শুরু করেছিলো।সেখানে একশ লোক জড় হয়েছিলো। আমি সেখানে কোনো পুলিশ দেখতে পাইনি।“
এদিকে সোমবার থেকে দেশটির অর্থমন্ত্রণালয় দখল করে রেখেছে আন্দোলনকারীরা। ইংলাক জানান এর ফলে দেশটির অর্থনীতি গভীর সংকটের মুখ পড়েছে।
রোববারের সংঘর্ষের পর ব্যাংককের শপিং মলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
এই সংঘর্ষ মূলত থাইল্যান্ডের অভিজাত, ধনী ও শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সঙ্গে দেশটির অপেক্ষাকৃত দরিদ্র শ্রেণির, যাদের বেশির ভাগই ব্যাংককের উত্তরাঞ্চল থেকে এসেছেন। থাইল্যান্ডের এই অঞ্চলটির জনগণের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে কম।

Leave a Reply