সেন্টমার্টিন রুটের ছয় জাহাজে দৈনিক লোকসান ২০ লাখ টাকা

Tweet

ভরা মৌসুমেও পর্যটক খরা
teknaf keariআব্দুর রহমান, টেকনাফ :
কক্সবাজাররাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভরা মৌসুমেই পর্যটক খরায় ভুগছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও প্রাকৃতিক সজীবতা ঘেরা সেন্টমার্টিনের অবস্থা এখন ভিন্ন। মৌসুমের শুরু থেকেই পর্যটকের অভাবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের ছয়টি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে প্রতিদিন ২০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জাহাজ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজের ব্যবস্থাপক শাহ আলম বলেন, ২০০৪ সালে জাহাজ চলাচল শুরুর পর থেকে এমন পর্যটক খরা কখনো হয়নি। একটি জাহাজ টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়া-আসা করলে কমপক্ষে অর্ধলাখ টাকা জ্বালানি খরচ লাগে। পর্যটকের অভাবে খরচ সামলানো সম্ভব না হওয়ায় জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকার কারণে দেশের সর্বদক্ষিণের ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। স্থানীয়রা মাছধরা ট্রলারে করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করলেও বিচ্ছিন্নভাবে টেকনাফ যাওয়া পর্যটকরা সেই ঝুঁকি নিতে নারাজ।
সরজমিনে দেখা যায়, জেটিতে অচল অবস্থায় পড়ে আছে সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলো। প্রতিদিন ধোয়ামোছা করে জাহাজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কর্মচারীরা। পর্যটকদের পদধুলি না পড়ায় জেটিগুলো হাহাকার করছে। পর্যটকের অভাবে কাউন্টারগুলো ফাঁকা অবস্থায় পড়ে আছে। অফিস কর্মচারীদের সময় যেন কিছুতেই পার হচ্ছে না। জাহাজ পাহারা দেয়ার জন্যই যেন তাদের প্রধান কাজ। বিচ্ছিন্নভাবে দুরদুরান্তের কয়েকজন পর্যটক আসলেও জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় কাউন্টারের আশপাশেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আফজল ও আজিজ জানান, কক্সবাজার সফরে আসলেও ভাবলাম একটু সেন্টমার্টিন ঘুরে যাই। কিন্তু জাহাজ চলাচল না করায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করিনি। সেন্টমার্টিন দর্শন আমার কাছে স্বপ্নই রয়ে গেল।
জাহাজ সংশ্লিষ্টরা জানায়, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন, এলসিটি কুতুবদিয়া, এলসিটি কাজল, ডে ক্রুজ, ফারহান নামক ছয়টি জাহাজ চলাচল করে। এছাড়াও পর্যটক বেশি থাকলে ঈগল নামক আরো একটি জাহাজ চলাচল করে। তিনটি ক্লাসে বিভক্ত করে এসব জাহাজ যাত্রী পারাপার করে। ক্লাস বিভাজনে যাত্রীদের কাছ থেকে মেইন ডেক ৫৫০-৭০০ টাকা, ব্রিজ ডেক ৮০০-১২০০ টাকা, ওপেন ডেক ৭০০-১০০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। প্রতিটি জাহাজে ৪০০-৫০০ যাত্রী পরিবহন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জাহাজ কর্মকর্তা জানায়, জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের বেতন ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। আয় না থাকার কারণে জাহাজ মালিকরাও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। তবে সব বেতন একসাথে দেয়ার অঙ্গীকার করেছে মালিকপক্ষ।
এলসিটি কুতুবদিয়ার ইনচার্জ আব্দুল আজিজ বলেন, রাজনৈতিক কারণে পর্যটক না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনিতে একটি জাহাজ চালাতে গেলে জ্বালানী ও আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে কমপক্ষে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। এলসিটি কুতুবদিয়া কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন স্টাফ খরচসহ মিলিয়ে দুই থেকে তিন লাক্ষ টাকা লোকসান গুনছে বলে তিনি জানান।
কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজের প্রথম শ্রেণীর ক্যাপ্টেন মো. আশরফ আলী বলেন, জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় জাহাজের উপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর আয়-উপার্জন বন্ধ রয়েছে। ছয়টি জাহাজের প্রায় ৮০০ অফিস স্টাফ এই আয়ের উপর নির্ভরশীল বলেও তিনি জানান।

Leave a Reply