জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে নতুন মেরুকরণ

Tweet

BD Jamaatদৈনন্দিন ডেস্ক:
বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য বিএনপিকে চাপ সৃষ্টি করে গেলেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কোনো সাহস দেখাচ্ছে না তারা।বিএনপি’র নেতৃত্বে ১৮ দলের গত এক বছরের সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী মাঠের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। বিশেষ করে সহিংস আন্দোলনের জন্য বার বার জামায়াতকেই দায়ী করেছে ক্ষমতাসীনরা। তাই তারা মনে করছে, বিএনপি থেকে জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করা গেলে চলমান রাজনৈতিক আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়বে। আর এর সুফল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুরোপুরিই ভোগ করতে পারবে।
সুতরাং, আন্দোলনকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বিএনপি জোট ভাঙার। আর অন্যদিকে বিএনপিও খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে এই মুহূর্তে জামায়াতকে ছাড়লে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি’র আদর্শগত মিল না থাকলেও তারা এখনই জামায়াতের সঙ্গ ছাড়বে না। বেগম জিয়া বলেন, তাদের সঙ্গে জোট সাময়িক। সময় হলেই তারা জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করবে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা বার বার যুদ্ধাপরাধের ইস্যু তুলে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার জন্য ক্রমান্বয়ে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার মতো শক্ত অবস্থান দেখাচ্ছে না। কারণ, জামায়াতের যে আন্তর্জাতিক লবিং রয়েছে তা আওয়ামী লীগ ভালোভাবেই বুঝতে সক্ষম হয়েছে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, এখানেই রাজনীতির বড় বৈপরীত্য। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ জামায়াত বিরোধী হলেও দলটি আন্তর্জাতিক চাপকে উপেক্ষা করতে পারছে না। আমেরিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ জামায়াতের পক্ষে। তাদের অনেকে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলে তা বাধাগ্রস্ত করতে চায়। আবার জামায়াত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হোক, এটা হয়ত তারা চায় না। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে সেই চাপ মোকাবেলা করা আপাতত সম্ভব নয়। আবার আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে বিএনপি থেকে আলাদা করলে ভোটে সুবিধা পাওয়া যাবে।
বিএনপি’র নেতৃত্বে ১৮ দলের সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী মাঠের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে বলেও তিনি মনে করেন।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময় বিএনপি’র ব্যাপক জামায়াত নির্ভরতা জামায়াতকেই শক্তিশালী করেছে। মুনতাসির মামুন মনে করেন, বিএনপি যদি জামায়াত থেকে প্রকাশ্যে আলাদাও হয়ে যায় তাহলেও তাদের সম্পর্ক শেষ হবে না। তাই তিনি মনে করেন, জামায়াত নিয়ে যতই কথা হোক তারা ভালোভাবেই টিকে আছে। আর বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামায়াতকে বাদ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও তা ফিরে পেতে জামায়াত আবার আদালতে আবেদন করেছে।
মামুন বলেন, আদালতের দিকে তাকিয়ে না থেকে সরকার নির্বাহী আদেশেই ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। সুশীল সমাজ সে জন্যই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তবে তা সফল হবে কিনা তা নির্ভর করছে ভবিষ্যত রাজনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর।
এদিকে, জামায়াতের কোনো নেতাকে পাওয়া না যাওয়ায় তাঁদের মতামত জানা যায়নি। তবে জামায়াতের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিৃবতিতে নেতারা সহিংসতা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের জন্য সরকারি দলের লোকজনকেই দায়ী করেছেন।

Leave a Reply