উখিয়া উপকুলে পোনা শিকারের মহোৎসব
কমরুদ্দিন মুকুল, উখিয়া :
উখিয়া-টেকনাফ বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকুলে অভিনব কায়দায় কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে পোনা শিকারের মহোৎসব চলছে। উপকুলের ঝাউ বাগান দখল করে অবৈধভাবে বসবাসরত রোহিঙ্গা নর-নারী, শিশু-কিশোর সামুদ্রিক জোয়ারের শুরু থেকে ভাটা পর্যন্ত নির্বিচারে চিংড়ি পোনা আহরণ করলেও বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছের পোনা মারা পড়ছে। এতে একদিকে যেমন উপকুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে সাগরে মাছ সংকটের সৃষ্টি হয়ে আমিষ জাতীয় খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী সচেতন মহল।
উপজেলার মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারেন্ট জাল ব্যবহার করে পোনা আহরণ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ থাকা স্বত্ত্বেও উখিয়া-টেকনাফ সাগর উপকুলে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা নির্বিচারে কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে পোনা আহরণ চলছে। স্থানীয় হ্যাচারীগুলোতে কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্টি চিংড়ি পোনার চাইতে সাগর থেকে আহরিত চিংড়ি পোনা গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ার সুবাদে চিংড়ি চাষীরা এসব পোনা ক্রয়ে আগ্রহী। যে কারণে সাগরের চিংড়ি পোনা আহরণকে টার্গেট করে উপকুলের বিভিন্ন স্থানে একাধিক চিংড়ি পোনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আড়ত খুলে স্থানীয় পোনা আহরণকারীদের আগাম টাকা দিয়ে চিংড়ি পোনা আহরণে উৎসাহ যোগান দিতে দেখা গেছে।
সরেজমিন উখিয়া উপকুলীয় এলাকা সোনারপাড়া ও ইনানী ঘুরে দেখা যায়, সামুদ্রিক জোয়ারকে টার্গেট করে উপকুলে বসানো হয়েছে হাজার-হাজার কারেন্ট জাল। এসব জালে চিংড়ি পোনার পাশাপাশি আটকা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা। পোনা আহরণকারীরা তাদের জালে আটকা পড়া চিংড়ি পোনাগুলো সংরক্ষণ করে বাদ বাকী পোনাগুলো বালুর চরে ফেলে দিচ্ছে। এভাবে সাগরের প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মারা পড়ছে।
সোনারপাড়া ঝাউবাগানে বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিক বাঁচা মিয়া (৬০) জানান, আহরিত প্রতিটি চিংড়ি পোনা ৩৫ পয়সা করে স্থানীয় হ্যাচারীগুলোতে বিক্রি করে দেয়া হয়। পোনা বিক্রি করে সে দৈনিক ৩/৪ শত টাকা আয় করার কথা স্বীকার করে বলেন, তার মতো অসংখ্য রোহিঙ্গা নর, নারী, শিশু, কিশোর চিংড়ি পোনা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। পোনা আহরণে ব্যস্ত রোহিঙ্গা মহিলা খদিজা বেগম (৪৫) জানান, তাদের জালে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা আটকা পড়ে। সেখান থেকে চিংড়ির পোনাটি আলাদা করে বাদ বাকী পোনা ফেলে দেওয়া হয়। ওইসব পোনাগুলো পানিতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মহিলা জানান, অধিকাংশ পোনা মারা যায় এবং ময়লা আবর্জনা থাকে তাই এগুলো ফেলে দিয়ে জাল পরিষ্কার করা হয়।
স্থানীয় আড়তদার মকবুল হোসেন (৪০) জানান, তারা বিভিন্ন হ্যাচারীর এজেন্ট হিসাবে চিংড়ি পোনা ক্রয় করে থাকে। দৈনিক একেকটি আড়তে লাখ লাখ টাকার পোনা লেনদেন হয় বলে সে জানান।
চোয়াংখালী গ্রামের ফিশিং বোটের মালিক নুরুল আলম মাঝি জানান, কারেন্ট জালের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা নিধনের ফলে সাগরে বিভিন্ন সময়ে মাছের আকাল দেখা দেয়। যার ফলে জেলে সম্প্রদায় পরিবারের মধ্যে অসহনীয় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। তিনি এসব পোনা আহরণকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, চিংড়ি পোনা আহরণের নামে নির্বিচারে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা নিধনের ফলে উপকুলীয় পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি সাগরে মাছ সংকটের সৃষ্টি হয়। এতে আমিষ জাতীয় খাদ্যের তীব্র ঘাটতি দেখা দেয়।
উখিয়ায় অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, কারেন্ট জাল ব্যবহার করে পোনা আহরণকারীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।