কানিজ ফাতেমার প্রার্থীতা বাতিল

Tweet

Kanij Fatemaনিজস্ব প্রতিবেদক:
অবশেষে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ছিটকে পড়লেন কক্সবাজার ৩ সদর-রামু আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক।
জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের প্রথম দিনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কানিজ ফাতেমা মোস্তাকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এর ফলে এ আসনে সাইমুম সরওয়ার কমলই এখন আওয়ামী লীগের একমাত্র বৈধ প্রার্থী।
জানা যায়, ‘ঋণ খেলাপি’র অভিযোগে কানিজ ফাতেমার মনোনয়নপত্রের বৈধতা স্থগিত করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন। দীর্ঘ দুই দফা শুনানির পরও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আওয়ামী মহিলা লীগের ওই নেত্রীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করতে পারেননি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানিয়েছেন, বাছাইয়ে ঝণ ও বিল খেলাপির কারণে কানিজ ফাতেমা মোস্তাক অবশেষে ঝড়ে পড়লেন।
তিনি আরো জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে ‘কে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হচ্ছেন’ তা নোটিশ বোর্ডের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে সাইমুম সরওয়ার কমলের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া কানিজ ফাতেমা আহমদের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংকের ‘ঋণ খেলাপি’ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ‘বিল খেলাপি’র অভিযোগ উঠায় তাঁর মনোনয়নপত্রের বৈধতা আটকে যায়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা দীর্ঘ প্রায় এক ঘন্টা কানিজ ফাতেমা আহমদের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংকের ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ২১২ টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগের শুনানি চলে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও সমাধানে আসতে না পারায় শুনানি বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মূলতবি করা হয়।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার ওই শুনানিতে সরেজমিন দেখা যায়, ‘ঋণ খেলাপি শুনানি’ মূলতবি করার আগমুহুর্তে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুই কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা মোস্তাকের বিরুদ্ধে দুইটি মিটারে ৩৯ হাজার টাকা ‘বিল খেলাপি’র অভিযোগ তুলেন। কিন্তু জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা পরবর্তী শুনানিতে ওই বিষয় তোলার কথা বলে শুনানি স্থগিত করে দেন।
দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর বিকাল সাড়ে ৩টায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী কানিজ ফাতেমা আহমদের ‘ঋণ খেলাপি’ ও ‘বিল খেলাপি’ নিয়ে আবারও শুনানি শুরু হয়। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শুনানি চলে। ওই শুনানিতেও কানিজ ফাতেমা, সাইমুম সরওয়ার কমল ও জনতা ব্যাংকের আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, কানিজ ফাতেমা ও সাইমুম সরওয়ার কমলের আইনজীবীরা ‘ঋণ খেলাপি’ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
ওই সময় জনতা ব্যাংকের আইনজীবী অধ্যক্ষ বাহার উদ্দিন এডভোকেট শুনানিতে জানান, কানিজ ফাতেমা খেলাপি ঋণগ্রহীতা ‘মেসার্স জেনারেল এজেন্সী’র বন্ধকদাতা ও জামিনদার হলেও মূল ঋণগ্রহীতা ঋণখেলাপি হওয়ায় জামিনদারও ওই টাকা পরিশোধ করেননি। আর জামিনদারও ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় আইনগত ভাবেই কানিজ ফাতেমা ‘ঋণখেলাপি’ হয়েছেন। এই ব্যাপারে ‘ঋণখেলাপি’ হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা চলছে।
‘ঋণ খেলাপি’র অভিযোগের শুনানির পর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ‘বিল খেলাপি’র অভিযোগের শুনানি শুরু হলে এক ব্যক্তি নিজেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) দাবি করে শুনানিতে জানান, তারা কানিজ ফাতেমার কাছ থেকে কোন বিল পাচ্ছেন না।
ওই সময় সাইমুম সরওয়ার কমলের পক্ষের লোকজন এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান এবং দুপুরে তোলা অভিযোগের বিষয়টি শুনানিতে তুলে ধরেন। ওই সময় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম (নাম অজ্ঞাত) জানান, আজই (বৃহস্পতিবার) বকেয়া বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
তিনি ওই সময় বিলের টাকা গ্রহণের রশিদও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওই রশিদ থেকে জানা যায়, কানিজ ফাতেমা বৃহস্পতিবার ১০টি বিলের অনুকূলে ৩৭ হাজার ৯৯১ টাকার (৬,৫২৪/-, ২,৫৫০/-, ১,৭৫৫/-, ২,৬৭৪/-, ৩,৪৯৩/-, ৯৯৩/-, ৪,২০২/-, ৮,৯৩৭/-, ২,৪৫৭/- ও ৭,০০৬/-) বিল পরিশোধ করেন। ইতিপূর্বে ২,৩৫৭ টাকার আরেকটি বিলও পরিশোধ করেন।
অথচ, নির্বাচনী বিধিতে বলা আছে, বিদ্যুৎ বিল মনোনয়নপত্র জমাদানের ৭ দিন আগে পরিশোধ করতে হবে।
বিকাল সাড়ে ৪টায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শুনানি শেষ করেন এবং আজ শুক্রবার শুনানির ফল ঘোষণা করা হবে জানান।
পরে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন সাংবাদিকদের জানান, কানিজের মনোনয়ন নিয়ে অনেক জটিলতা আছে। জঠিলতার কারণে আজ শুক্রবার ফাইনাল রেজাল্ট ফল বোর্ডে টানিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে সাইমুম সরওয়ার কমলকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ঘোষণা করার জন্য তাঁর ভক্ত ও শুভাকাংখিরা দাবি তুলেছেন।

Leave a Reply