উখিয়ার উপজাতি পরিবারগুলো নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত

Tweet

Ukhiya upjatiনিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া
উখিয়ার পাহাড়ী জনপদে বসবাসরত সহশ্রাধিক পরিবারের ৫ হাজারেও অধিক উপজাতি নূন্যতম শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না যুগ-যুগ ধরে। এসব পরিবারের শত-শত শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। শিক্ষার আলো থেকে এ জনপদের শিশুরা অনেক দুরে। জীবন জীবিকার তাগিদে অল্প বয়সে শিশুরা জড়িয়ে পড়ে কঠোর পরিশ্রমে। অভাব অনটন এদের নিত্যসঙ্গী। সব মিলিয়ে এখানকার দারিদ্র্য উপজাতিগুলো নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর দিন যাপন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ উপজেলা জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালী চাকমাপাড়া, পালংখালী ইউনিয়নের তেলখোলা, মোছারখোলাসহ তিন গ্রামের সহশ্রাধিকার পরিবারে প্রায় ৫ হাজারেও অধিক উপজাতির বসবাস। সরকার গ্রামীণ জনপদের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিক, শিশুর নিরাপদ মাতৃত্ব, বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ চিকিৎসা সেবা মানুষের দোর গোড়ায় পৌছে দেওয়ার কথা বললেও এখানকার উপজাতি পরিবারগুলো কোনটার সুফল ভোগ করতে পাচ্ছে না। এসব পরিবারগুলোর নিজস্ব কোন জমি জমা না থাকায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করলেও বছরের ৬ মাস তাদের দিন কাটে অনাহারে, অর্ধাহারে। আয়ের উৎস বলতে জুম চাষ, লাকড়ী কেটে বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ না থাকায় পড়ালেখার প্রতি তাদের আগ্রহ নেই বললে চলে।
সরেজমিন মোছারখোলা, তেলখোলা গ্রাম ঘুরে স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দারিদ্রতার কাছে লেখাপড়া অবরূদ্ধ। স্কুলে যাওয়ার চাইতে ছেলেমেয়েরা মা-বাবার সাথে পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করতে আগ্রহী।
তেলখোলা রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ফরিদ আহমদ জানান, মোছারখোলা গ্রামে একটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও বেতন ভাতা না পাওয়ার কারণে শিক্ষকেরা স্কুলে আসে না। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়াও হয় না। অভাব অনটন সহ বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশে বেড়ে উঠা উপজাতি পরিবারের শিশুরা পড়ালেখার চাইতে শ্রমে আগ্রহী। কিছু কিছু ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করলেও অর্থের অভাবে ৫ম শ্রেণীতে গিয়ে ঝরে পড়ে।
তিনি আরো বলেন, তেলখোলা রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপজাতি ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গ্রামের কেউছি চাকমা (৩৬) জানান, পেটে ভাত না থাকলে পড়ালেখা করে লাভ কি? গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় পরিবারের শিশু, কিশোর পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
একই গ্রামের অং লাখাইন চাকমা (৩৮) জানান, সরকারীভাবে একটি টিউবওয়েল বসালেও বর্তমানে ওই টিউবওয়েলে পানি উঠেনা। পুকুর, জলাশয় ও খালের পানি ব্যবহার করে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে।
স্থানীয় ঐখালা চাকমা (৩৫) জানান, এখানে কোন স্বাস্থ্য কর্মী বা স্বাস্থ্য বিভাগের কোন লোকজন আসে না। হাতুড়ে ডাক্তার সর্বস্ব এখানকার প্রায় মানুষকে ঝাড়পোকড় ও বনজ ঔষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ বালাই দূর করতে হয়।
প্রাকৃতিক পরিবেশে গর্ভপাত এখানে চিরাচরিত নিয়ম। ধুলোবালিতে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েরা বেশির ভাগই নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা সে জোর দিয়ে বললেন।
গ্রামের লামং চাকমা (৩৭) জানান, ৬/৭ বছর বয়স হলে শিশুদের জীবিকার তাগিতে ছুটতে হয়। গভীর পাহাড়ে লাকড়ী কেটে কিংবা বাঙ্গালীদের খেত খামারে শ্রম দিয়ে দৈনিক মজুরিতে যা পায় তা দিয়ে নুন আনতে পানতা পুরায়।
সে আরো জানান, আগে এখানকার অধিকাংশ পরিবার জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জমি জমার দাম বেড়ে যাওয়ায় আশেপাশে বসবাসরত প্রভাবশালী বাঙ্গালি পরিবারগুলো বনভূমি দখল করে নানা প্রকার স্থাপনা তৈরি করায় জুম চাষের জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। তাই শ্রম দিয়ে মজুরী করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মানিক চাকমা এসব অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় জর্জরিত এসব পরিবারগুলো সরকারীভাবে প্রদত্ত বিভিন্ন সাহায্য সহযোগীতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রদত্ত ভিজিডির গম দেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম জানান, যে কোন আবেদন নিবেদন নিয়ে আসলে উপজাতি পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারীভাবে প্রদত্ত ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

Leave a Reply