বিশ্বের ধনী বিশ নেতা

Tweet

world reach lidorদৈনন্দিন ডেস্ক:
একটা সময় ছিল যখন অঢেল সম্পত্তির মালিকরা সহজে নেতা হতে পারতেন না। নেতা হবেন সাধারণের প্রতিনিধি, তাই তাকেও সাধারণ হতে হবে- এমন সব কথা আর ধারণাই প্রচলিত ছিল। কিন্তু একুশ শতকে এসে সে ধারণা পাল্টে গেছে। ঠিক এই সময় আমরা যদি বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের সম্পত্তির হিসাব করতে বসি, তবে চোখ কপালে উঠে যাবে। সাধারণ মানুষ কল্পনাই করতে পারবে না আসলে তাদের ধনসম্পদ কত।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম হাফিংটনপোস্ট বিশ্বের প্রথম সারির ২০ জন নেতার অর্থের হিসাব নিয়ে একটি নিবন্ধ ছেপেছে।
হাফিংটন পোস্টের ওই নিবন্ধে ধনী নেতার তালিকার শীর্ষে আছেন এক সময়কার সমাজতান্ত্রিক দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আবার অন্যদিকে খড়াপীড়িত দেশ সোয়াজিল্যান্ডের রাজা মাসওয়াতিও আছেন। ধনী নেতাদের এই তালিকা তৈরিতে তাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ মাথাপিছু আয়ের তথ্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। ধনী এই নেতাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। এশিয়ার মধ্যে আছেন ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।
নিবন্ধ মতে, এই নেতারা বেশিরভাগই পারিবারিক সূত্রে নেতা হয়েছেন, বাণিজ্যে বিনিয়োগ এবং কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাই বলে ধনী নেতাদের দেশবাসীও যে ধনী, তা কিন্তু নয়।

বিশ্বের ধনী নেতাদের সম্পদের পরিমাণ আর তাদের দেশের জনগণের মাথাপিছু আয়-

ভ্লাদিমির পুতিন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট)। তার সম্পদের মূল্য ৪ হাজার কোটি ডলার। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৪ হাজার ডলার। চলতি বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টেলিগ্রাফ রাশিয়ার অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, রাশিয়ার ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে এবং গরীবরা আরো গরীব হচ্ছে। দেশটির প্রায় ১৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

ভূমিবল আতিল্যতেজ (থাইল্যান্ডের রাজা)। তার সম্পদের মূল্য ৩ হাজার কোটি ডলার। দেশটির মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ৪০০ ডলার। থাইল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার মধ্যে এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

হাসান আল বলখিয়াহ (ব্রুনাইয়ের সুলতান)। তার সম্পদের মূল্য ২ হাজার কোটি ডলার। দেশের মাথাপিছু আয় ৪১ হাজার ডলার। বিশ্ব মানচিত্রে ছোট দেশ ব্রুনাই। দেশটিতে শিশুমৃত্যু এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার হার বেশি। অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমান্বয়ে দেশটিতে দারিদ্র্যের হার বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ (সৌদি আরবের বাদশাহ)। তার সম্পদের মূল্য ১৮’শ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ২১ হাজার ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ানে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। সেখানে বলা হয়, দেশটিতে ক্রমেই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ বিষয়ে সৌদি বিশেষজ্ঞ রোজি বশির বলেন, ‘রাষ্ট্র কৌশলে দরিদ্রতা লুকাচ্ছে। ধনিক শ্রেণীর মানুষেরা কখনো গরীবের দুর্দশা দেখে না। মানুষ ক্ষুধার্ত এখানে।’

খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান (আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট)। তার সম্পদের মূল্য ১৫’শ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ৪০ হাজার ডলার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে আরব আমিরাতে দরিদ্রের সংখ্যা কম। দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে শ্রমিকদের শ্রম শোষণসহ দৈহিক নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে।

মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম (দুবাইয়ের আমির)। তার সম্পদের মূল্য ১৪’শ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ১৬ হাজার ডলার। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি ‘ডার্ক সাইড অব দ্য দুবাই ড্রিম’ নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। দুবাইয়ের বাহ্যিক দিক খুব চাকচিক্যময় হলেও এর ভেতরে দিনে দিনে জন্ম নিয়েছে শ্রম শোষণের মতো মারাত্মক ব্যাধি। লক্ষাধিক অভিবাসী শ্রমিককে বিনা মজুরিতে দিনের পর দিন কাজ করিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার নজির দুবাইয়ের রয়েছে।

কিম জং উন (উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা)। তার সম্পদের মূল্য ৫০০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ১৮’শ ডলার। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া ঘুরে এসে নিজের অভিজ্ঞতা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন কিম হার্ৎজার নামের এক গবেষক। তার ভাষ্য মতে, ‘আমি উত্তর কোরিয়া ঘুরে এলাম। সারা বছর ধরে সেখানে চালের সঙ্কট, চাষাবাদে সমস্যা। দেশটির শিশুরা পুষ্টিহীনতা আর অনাহারে স্বাভাবিক দৈহিক আকৃতি হারাচ্ছে।’

দ্বিতীয় হ্যান্স অ্যাডাম (লিসস্টেনস্টেইনের যুবরাজ)। তার সম্পদের মূল্য ৫০০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৩৫ হাজার ডলার। ইউরোপের ছোট দেশ হিসেবে লিসইনস্টাইনে দরিদ্রের সংখ্যা খুব কম।

ষষ্ঠ মোহাম্মদ (মরক্কোর রাজা)। তার সম্পদের মূল্য ২৫০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

মিগুয়েল হুয়ান সেবাস্তিয়ান পিনেরা (চিলির প্রেসিডেন্ট)। তার সম্পদের মূল্য ২৫০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ১৫ হাজার ডলার। চিলির ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

হামাদ বিন খলিফা আল তাহনি (কাতারের আমির)। তার সম্পদের মূল্য ২০০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ৯০ হাজার ডলার। কাতার বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা যায়, দেশটির স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। কাতারের অর্থনীতি অভিবাসী শ্রমিক নির্ভর হওয়ায় দেশটিতে শ্রম শোষণ এবং নিপীড়নের মতো ঘটনা ঘটছে।

সোনিয়া গান্ধী (ভারতের কংগ্রেস দলের সভাপতি)। তার সম্পদের মূল্য ২০০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ১৫’শ ডলার। ভারতের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

দ্বিতীয় অ্যালবার্ট (মোনাকোর যুবরাজ)। তার সম্পদের মূল্য একশ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৬৩ হাজার ডলার। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে মোনাকোতে কোনো দারিদ্র্য নেই।

কাবুস বিন সাঈদ (ওমানের সুলতান)। তার সম্পদের মূল্য ৭০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ২৩ হাজার ৭০০ ডলার। ওমানের ৮৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

থিওডর অবিয়াং নাগুমা বাসোগো (গায়ানার প্রেসিডেন্ট)। তার সম্পদের মূল্য ৬০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ২৪ হাজার ডলার। দেশটির ৪৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

বাশার আল আসাদ (সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট)। তার সম্পদের মূল্য ৫৫ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার। ২০১১ সাল থেকে দেশটিতে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে অর্থনীতি ধসে পড়েছে। দেশটির নারী এবং শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে।

ইলহ্যাম আইজেভ (আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট)। তার সম্পদের মূল্য ৫০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ৭ হাজার ডলার। মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

দ্বিতীয় এলিজাবেথ (ইংল্যান্ডের রানী)। তার সম্পদের মূল্য ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ৩৮ হাজার ডলার। খোদ বিবিসির নিবন্ধেই বলা হয়, ইংল্যান্ডের প্রতি ছয়টি শিশুর মধ্যে একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। চলমান অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে দেশটিতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

চতুর্থ শাহবা আল-আহমেদ আল-জাবের আল-শাহবা (কুয়েতের শেখ)। তার সম্পদের মূল্য ৪০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ৫৬ হাজার ডলার। তেল সমৃদ্ধ এই দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিক সমস্যা ভয়াবহ।

তৃতীয় মাসওয়াতি (সোয়াজিল্যান্ডের রাজা)। তার সম্পদের মূল্য ১০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার। দেশটির ৮৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। খরা আর দুর্ভিক্ষে দেশটির মানুষ প্রায়ই সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে।

Leave a Reply