রেকর্ড পরিমাণ আমন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা

Tweet

Amon Riceআরফাতুল মজিদ:
দীর্ঘ এক যুগ পর এবার জেলায় রেকর্ড পরিমানে রোপা আমন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অনূকুল থাকায় ও কৃষকদের মাঝে চাহিদা মত সার ও কীটনাশক পৌছার কারণে এবারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করছে সংশ্লিষ্টরা। তাই ইতিমধ্যেই উৎপাদনের অর্ধেক সোনালী আমন ধান কৃষকরা ঘরে তুলেছে। সদরসহ আট উপজেলায় এবারে ইাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় তিন জাতের রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩ হাজার ২শ’ ৭৯ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৭শ’ ৯১ মেট্রিক টন চাল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্ধ বছরের হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় তিন ধরণের রোপা আমন চাষে ৭৩ হাজার ২শ’ ৭৯ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চকরিয়া উপজেলায় রোপা আমন আবাদে হাইব্রিড ১৭ হেক্টর, উফশী ১৬ হাজার ১শ’ ৯২ হেক্টর ও স্থানীয় ২ হাজার ৪শ’ হেক্টরসহ মোট ১৮ হাজার ৬শ’ ৯ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাইব্রিড ৫৬ মে. টন, উফশী ৪৩ হাজার ৯শ’ ৩৭ মে. টন ও স্থানীয় ৩ হাজার ৮শ’ ৪০ মে. টনসহ সর্বমোট ৪৭ হাজার ৮শ ৩৩ মে. টন চাল। পেকুয়া উপজেলায় উফশী ৬ হাজার ২শ’ হেক্টর ও স্থানীয় ১ হাজার ৫০ হেক্টর সহ মোট ৭ হাজার ২শ’ ৫০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ধরা হয়েছে উফশী ১৬ হাজার ৮শ’ ২৪ মে. টন ও স্থানীয় ১ হাজার ৬শ’ ৮০ মে. টনসহ মোট ১৮ হাজার ৫শ’ ৪ মে. টন চাল। রামু উপজেলায় আবাদে লক্ষ্যমাত্রা উফশী ৮ হাজার ৪শ’ হেক্টর ও স্থানীয় ৫শ’ হেক্টর সহ মোট ৮ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা উফশী ২২ হাজার ৭শ’ ৯৩ মে. টন ও স্থানীয় ৮শ’ মে. টনসহ মোট ২৩ হাজার ৫শ’ ৯৩ মে. টন চাল।  সদর উপজেলায় আবাদে লক্ষ্যমাত্রা উফশী ৮ হাজার ৪শ’ হেক্টর ও স্থানীয় ৫শ’ হেক্টরসহ মোট ৮ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে উফশী ২২ হাজার ৭শ’ ৯৩ মে. টন ও স্থানীয় ৮শ’ মে. টন চাল। উখিয়া উপজেলায় আবাদে লক্ষ্যমাত্রা উফশী ৮ হাজার ৩শ’ হেক্টর ও স্থানীয় ৩শ’ হেক্টরসহ মোট ৮ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা উফশী ২২ হাজার ৫শ’ ২২ মে. টন ও স্থানীয় ৪শ’ ৮০ মে. টনসহ মোট ২৩ হাজার ২ মে. টন চাল। টেকনাফ উপজেলায় আবাদে লক্ষ্যমাত্রা হাইব্রিড ২০ হেক্টর, উফশী ৯ হাজার ৪শ’ হেক্টর ও স্থানীয় ৬শ’ ৬০ হেক্টরসহ মোট ১০ হাজার ৮০ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাইব্রিড ৬৬ মে. টন, উফশী ২৫ হাজার ৫শ’ ৭ মে. ও স্থানীয় ১ হাজার ৫৬ মে. সহ মোট ২৬ হাজার ৬শ’ ২৯ মে. টন চাল। মহেশখালী উপজেলায় আবাদে লক্ষ্যমাত্রা উফশী ৭ হাজার ১শ’ হেক্টর ও স্থানীয় ৩শ’ ৪০ হেক্টর সহ মোট ৭ হাজার ৪শ’ ৪০ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে উফশী ১৯ হাজার ২শ’ ৬৬ মে.টন ও স্থানীয় ৫শ’ ৪৪ মে. টন সহ মোট ১৯ হাজার ৮শ’ ১০ মে.টন চাল। কুতুবদিয়া উপজেলায় আবাদে লক্ষ্যমাত্রা উফশী ২ হাজার হেক্টর ও স্থানীয় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টরসহ মোট ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে উফশী ৫ হাজার ৪শ’ ২৭ মে.টন ও স্থানীয় ২ হাজার ৪শ’ মে. টনসহ মোট ৭ হাজার ৮শ’ ২৭ মে. টন চাল। সদরসহ আট উপজেলায় সর্বমোট আবাদে লক্ষ্যমাত্রা হাইব্রিড ৩৭ হেক্টর, উফশী ৬৫ হাজার ৯শ’ ৯২ হেক্টর ও স্থানীয় ৭ হাজার ২শ’ ৫০ হেক্টরসহ মোট ৭৩ হাজার ২শ’ ৭৯ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাইব্রিড ১২২ মে. টন, উফশী  ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯ মে. টন ও স্থানীয় ১১ হাজার ৬শ’সহ সর্বমোট ১ লাখ ৯০ হাজার ৭শ’ ৯১ মে. টন চাল।
এছাড়া আট উপজেলায় আবাদে অগ্রগতি রয়েছে উফশী ৬৯ হাজার ১শ’ ৪০ হেক্টর ও স্থানীয় ৭ হাজার ২শ’ ১০ হেক্টরসহ মোট ৭৬ হাজার ৩শ’ ৫০ হেক্টর জমি।
চকরিয়া কৈয়ারবিল ইউনিয়নের কৃষক আলী ও কবির আহমদ জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর পর এই বছর আমন ধান চাষ করে লাভবান হওয়ায় আশা করা যাচ্ছে। কারণ গাছে ধান জম্মের আগে জমিতে সেচের অভাব হয়। তখন বৃষ্টি হয় না। মেশিন দিয়ে সেচ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এবারে গাছে ধান জম্মের সময় কয়েক দফা করে বৃষ্টি হয়েছে। এতে আমন চাষিরা বেশি উপকৃত হয়েছে।
শহরের বিডিআর ক্যাম্প এলাকার কৃষক বজল করিম জানান, এবছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কয়েক দিন হচ্ছে পাকা ধান ঘরে তোলার কাছ করছি। যদি ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় তবে বাম্পার ফলনে স্বার্থকতা পাওয়া যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুল আবছার জানান, আবহাওয়া অনূকুল থাকায় ও কৃষকরা চাহিদা মত সার, কীটনাশক সরবরাহ পাওয়ায় এবারে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ পর ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে জেলায় রেকর্ড পরিমাণে আমন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।

Leave a Reply