ষমতায় বসানোর কারিগর এরশাদ: দি নিউইয়র্ক টাইমস

Tweet

The N Yদৈনন্দিন ডেস্ক:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় বসানোর কারিগর। দুই নেত্রীর কাকে দেশের ‘রানী’ বানাবেন তা রয়েছে তাঁর হাতেই। মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ অভিমত কলামে এমনটিই বলা হয়েছে।মঙ্গলবার ‘দ্য কুইনমেকার অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে উল্লিখিত মন্তব্য করে আরও বলা হয়, এক সময় তাঁকে (এরশাদ) ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য যে দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া একজোট হয়ে মাঠে নেমেছিলেন, আজ তারাই ক্ষমতায় আরোহণের জন্য এরশাদের মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকেন। প্রতিবেদনটি শুরু হয়েছে এভাবে, বাংলাদেশকে বলা যেতে পারে পুনরুত্থানের ভূমি। একদিন যাকে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল, ঢোকানো হয়েছিল কারাগারে- দু’দশক পর যেন তিনি সদর্পে ফিরে এসেছেন।
বলা হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র চরম সংকটাপন্ন। এখানকার রাজনীতিবিদদের জনগণের প্রতি এতটুকু জবাবদিহিতা নেই। নির্বাচন ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। আর নির্বাচন মানে হচ্ছে বিবদমান দুই নেত্রীর যুদ্ধে একজনকে ধ্বংস করে আরেকজনকে বিজয়ী করা। প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নয়ন, অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দুর্নীতি আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মেনে শেখ হাসিনা বেশ কোণঠাসা।
বিপরীতে খালেদা জিয়া যে খুব ভালো অবস্থানে তাও নয়। ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাপক দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের উত্থান ও মদতদান এবং বিরোধী দল হিসেবে অসহযোগিতামূলক আচরণ বিশেষ করে অব্যাহত সংসদ বর্জনে তাঁর প্রতিও মানুষের পূর্ণ আস্থা নেই। তবুও বাংলাদেশ এখনও এ দু’ভাগেই বিভক্ত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে কড়া নাড়ছে আরেকটি সংসদ নির্বাচন। আর এতেও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। তবে এখন পর্যন্ত বলা যায়, আসন্ন নির্বাচন বর্জনই করতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। অন্যদিকে এরশাদ যোগ দিয়েছেন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায়, শেখ হাসিনার সঙ্গে। আর সত্যি সত্যিই যদি বিএনপি নির্বাচনে না যায়, তাহলে প্রধান বিরোধী দল হবে জাতীয় পার্টি। অর্থাৎ শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আরোহণের কারিগর হবেন এরশাদই। স্বৈরশাসন কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে যত অভিযোগই থাকুক সেসব তখন গৌণ।
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই-এরশাদ : নির্বাচনের জন্য বর্তমানে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। বিরাজমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র ব্যাহত হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই দাবি করে এরশাদ বলেন, গোটা দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি। ডিসি-এসপি-জজ-ডাক্তার সবাই দুই দিকে। আমার তো কোনো লোক নেই। তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস কর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কিনা? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে হবে? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড-তো কখনোই ছিল না, সর্বত্র দলীয়করণ। নির্বাচন কমিশনের প্রতি মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে এরশাদ বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঠিক থাক, কোনো সমস্যা নেই। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা পরিবর্তন করুন, আমাদের সময় দিন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার জন্য নির্ধারিত তারিখ পেছানোর প্রয়োজন।
জাতীয় পার্টির প্রধান বলেন, হাজার হাজার মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের মনোনয়ন ফরম কিনছেন। এরপর তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। তারপর কাগজপত্র প্রস্তুতের জন্য আরও ৪-৫ দিন সময় প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে ২ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল কীভাবে সম্ভব- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এ সময় এরশাদ নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, শুধু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করেছে এটা ঠিক হয়নি। জাতীয় পার্টিও একটি বড় দল। নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের চেয়ে মাত্র দুটি আসন কম পেয়েছিল।
তিনি বলেন, আমার কিছু প্রস্তাব ছিল। ওই প্রস্তাব অনুসরণ করলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম হতো।
বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। কতটুকু সুষ্ঠু নির্বাচন হবে জানি না। আপনাদের এত আহ্বান জানালাম, শুনলেন না। আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়নি। তবু আমার দল নির্বাচন করছে। নির্বাচন না করলে পার্টি থাকে না। এই যে ৩০০ আসনে আমার ৮০০-১০০০ ক্যান্ডিডেট চলে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি কারও পক্ষ হয়ে কথা বলছি না। সংবিধানে যেভাবে আছে, সেভাবেই নির্বাচন হবে। কেন নির্বাচনে আসলেন না? অবরোধে রেললাইন উপড়ে ফেলা, গাড়ি-ঘোড়া চলতে না দেয়া ও পরীক্ষা-প্রক্রিয়া ব্যাহত করায় ১৮-দলীয় জোটের কড়া সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, গাড়ি-ঘোড়া চলছে না, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না, গরিব মানুষ খেতে পারছে না। আমরা কোন গণতন্ত্রের চর্চা করছি? এ কি গণতন্ত্রের রূপ? আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে সংঘাত আরও বাড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার দাবি জানান তিনি। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, মসিউর রহমান রাঙ্গা, সুনীল শুভরায়, তাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply