তৈদুছড়ার পাহাড়ী ঝরনা
পর্যটন ডেস্ক:
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার তৈদুছড়া। ত্রিপুরা ভাষায় তৈদু শব্দের অর্থ হচ্ছে পানির দরজা। প্রাকৃতিক শোভা আর রোমাঞ্চ – দুয়ের স্বাদই রয়েছে অসম্ভব সুন্দর প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর পাথরের ছড়ায়। স্বচ্ছ পানিতে চোখে পড়ে মাছের আনাগোনা। তবে সেখানে যাওয়ার আগে পেরিয়ে যেতে হবে সবুজ পাহাড়, পাথরের গুহা, জলপ্রপাত আর ঝরনা। যাত্রাপথ দারুণ রোমাঞ্চকর। গাড়িতে করে দীঘিনালা উপজেলার চাপ্পাপাড়া পর্যন্ত গিয়ে কাঁচা রাস্তাটুকু পায়ে হেঁটে এগিয়ে যেতে হবে। পথে বোয়ালখালী ছড়ার পাশের গ্রাম বুদ্ধমা পাড়ায় একটু বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারেন। এরপর বোয়ালখালী ছড়া পার হলেই তৈদুছড়ার মুখ দিয়ে প্রবেশ করবেন। অল্প পানির ছড়া দিয়েই হাঁটতে হবে। দূর থেকে দেখে চমকে যেতে পারেন। মনে হবে বুনো হাতির পাল পানিতে গা ভাসিয়ে রয়েছে। আসলে এগুলো হাতি নয়, সারিবদ্ধ বড় বড় পাথর। পুরো ছড়াটিতেই এ রকম বড় বড় পাথর, মাঝেমধ্যে সুড়ঙ্গের মতো। ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর কান যেন বন্ধ হয়ে আসতে চাইবে তীব্রবেগে পানি গড়িয়ে পড়ার শব্দে। ১০ মিনিট হাঁটাপথ এগিয়েই পেয়ে যাবেন তৈদুছড়ার জলাধার। ওপরে গেলে পানির উৎসও দেখা যাবে। একটু বিশ্রাম নিয়ে ওপরে উঠতে পারেন। প্রায় এক ঘণ্টা এগোনোর পর আবার সেই কানফাটানো পানির আওয়াজ। আরও একটু এগিয়ে চোখে পড়বে ঝরনা। ঠিক সিঁড়ির মতো প্রাকৃতিক ধাপ আছে। তাতে বসে বা শুয়ে পানিতে গা ভাসানো যায়। মাঝেমধ্যে আবার পানির স্রোত বেড়ে হঠাৎ ধাক্কা মারে। সেজন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এই ঝরনাটির ওপরে আছে আরও একটি ঝরনা। আর ঝর্নাটির নিচে পানি পড়ে তৈরি হয়েছে ছোট হ্রদ।
সেই ঝরনা থেকে সাবধানে আরও চড়াই পেরিয়ে আপনি যেতে পারেন সবচেয়ে উঁচু ছড়াটিতে। এখানকার পানিতে আদিবাসীরা ছোট ছোট মাছ ধরে। ছড়া ধরে একটু হাঁটতেই সামনে পড়ল আর একটি জলপ্রপাত। এরপর সামনে একটি গুহা। প্রবেশমুখের দুই পাশের দেয়ালে ধাপ কাটা। প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে, যেন বিশ্রাম নেওয়ার বেঞ্চ। চাইলে এখানে বসে আড্ডা দেওয়া যাবে। গুহা পেরিয়ে এবার বড় ঝরনা। এখানেও রয়েছে কয়েক ধাপে পাথরের সিঁড়ি। একদম পিচ্ছিল নয়। শুধু পানির ধাক্কা থেকে একটু সাবধান। সারা বছরই এখানে পানি থাকে। ঝরনার আশপাশের পাহাড়ে আদিবাসীরা জুমচাষ করেন।
জেনে রাখুনঃ
দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে তৈদুছড়া যাওয়ার জন্য পায়ে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে তেমন অসুবিধা হবে না। পাহাড়ের চড়াই বেয়ে ওঠাও তেমন কষ্টকর নয়। পথে আদিবাসীদের আতিথেয়তা মুগ্ধ করবে। সঙ্গে একজন পরিচিত আদিবাসী গাইড থাকলে ভালো হবে। সময় নিয়ে বের হলে আরও দেখতে পাবেন তৈদুছড়ার পাশে শিবছড়ি পাহাড়ের পাথরের শিবমূর্তি, পাথরের হাতি ও পাথরের বড় সাপ।
কীভাবে যাবেন কোথায় থাকবেনঃ
ঢাকার কলাবাগান অথবা কমলাপুর থেকে শান্তি পরিবহন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলী বা স্টার লাইন পরিবহনে খাগড়াছড়ি নামতে হবে। এরপর দীঘিনালার বাস ধরতে হবে। এখানে রাতটা থেকে পরের দিন সকালে যেতে পারেন তৈদুছড়া। রাতে থাকার জন্য এখানে একটি রেস্টহাউসও আছে। তৈদুছড়া যাওয়ার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে একজন গাইড ঠিক করে রাখতে পারলে ভালো হয়। দীঘিনালা থেকে চাপ্পাপাড়া পর্যন্ত গাড়িতে গিয়ে চলতে পারেন তৈদুছড়ার পথে। সময় লাগবে আসা-যাওয়াসহ সব মিলিয়ে পাঁচ ঘণ্টা। তবে ভোরে রওনা দিলে বিকেলের মধ্যে ফেরা সহজ হবে। যাঁরা চট্টগ্রাম থেকে আসবেন, তাঁরা চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে শান্তি পরিবহনের বাসে দীঘিনালা এসে একই পদ্ধতিতে তৈদুছড়া সফর করতে পারেন।